‘লাখো কর্মঠ তরুণই বাংলাদেশের চালিকাশক্তি’: ডেপুটি ব্রিটিশ হাইকমিশনার কানবার হুসেন বোর
‘সময় এখন তরুণদের। সমাজকে শক্ত কাঠামো দান করতে তরুণদের ভূমিকা এবং নারীর অংশগ্রহণ অনবদ্য’
এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে গত ১০ মার্চ ২০১৮ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘অ্যাকটিভ সিটিজেনস রিজিওনাল অ্যাচিভারস সামিট-২০১৮। সামিট উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেপুটি ব্রিটিশ হাইকমিশনার জনাব কানবার হুসেন বোর। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর বারবারা উইকহেম এবং ইউএসএইআইডি-ডিএফআইডি এনজিও হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি প্রকল্পের সাবেক চিফ অব পার্টি ডা. হালিদা হানম আক্তার। সভাপতিত্ব করেবেন ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সামিটে ৬৫০ জনের বেশি তরুণ-তরুণী ও দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন। সামিটে অ্যাকটিভ সিটিজেনস ইয়ুথ লিডাররা স্টলের মাধ্যমে তাদের গৃহীত সামাজিক উদ্যোগগুলো প্রদর্শন করেন। এছাড়া সামিটে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণে ‘এসডিজি ও তারুণ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা-সহ বেশ কয়েকটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তরুণরা তাদের কাজের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে ডেপুটি ব্রিটিশ হাইকমিশনার জনাব কানবার হুসেন বোর বলেন, ‘বাংলাদেশের লাখো কর্মঠ তরুণই এদেশের চালিকাশক্তি। বাংলাদেশের দিনবদলের ক্ষেত্রে এই তরুণরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে এবং তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ একটি সফলতম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।’
জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে সাত বছর বয়সে ইরান থেকে ইংল্যান্ডে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়া কানবার হোসেইন তার শৈশবের গল্প শোনান। অচেনা দেশ, অজানা ভাষা মোকাবিলা করে তিনি কীভাবে সফল হয়েছিলেন তা তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘এখন জীবনে সফল হওয়ার জন্য তরুণদের সামনে অনেক সুযোগ রয়েছে, যেটা আমাদের সময়ে ছিল না।’
কানবার হুসেন বোর বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে ইতিমধ্যে তরুণরা তাদের যাত্রা শুরু করেছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল বিশ্বের যতগুলো দেশে ‘অ্যাকটিভ সিটিজেন্স’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। যুক্তরাজ্য সরকার এই কর্মসূচির সাথে থাকতে পেরে গর্ববোধ করছে।’
ব্রিটিশ কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর বারবারা উইকহেম বলেন, ‘তরুণরা হলো পরবর্তী প্রজন্মের নেতা। তারা যত বেশি দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র আকারে ততই এগিয়ে যাবে।’ ‘অ্যাকটিভ সিটিজেনস কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাল্যবিবাহ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর সামাজিক নানা অসঙ্গতি রোধে কাজ করে চলেছে এদেশের অ্যাকটিভ সিটিজেনসরা। নিজেদের কমিউনিটির উন্নয়নের পাশাপাশি তারা অন্য কমিউনিটির সমস্যা সমাধানেও তৎপর রয়েছে। আমি তাদের সামাজিক উদ্যোগগুলো দেখে মুগ্ধ ও অভিভূত হয়েছি।’
তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘মেলাও হাত, চলো বহুদূর, আনো দিনবদল।’ তখন তরুণরাও সমস্বরে তার সঙ্গে শপথবাক্য পাঠ করেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জন্য একটি ব্রিলিয়ান্ট (উজ্জ্বল) ভবিষ্যৎ দেখতে চাই। এই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য তরুণদের দক্ষ ও সক্রিয় থাকতে হবে।’ তরুণদের উদ্দেশ্যে
তিনি বলেন, ‘তোমরা তোমাদের কাজের মাধ্যমে বিশ্বনেতা হয়ে উঠবে- এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট ও ব্রিটিশ কাউন্সিল সহায়তা নিয়ে তোমাদের পাশেই থাকবে।’
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর যৌথ অংশীদারিত্বে ২০০৯ সাল থেকে সারাদেশে অ্যাকটিভ সিটিজেনস কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে একটি শান্তি ও সৌহার্দ্যরে পৃথিবী তৈরিতে একদল তরুণ-তরুণীর মাঝে আস্থা ও বোঝা-পড়া সৃষ্টি হয়েছে, যা তাদেরকে ইয়ুথ লিডার হিসেবে গড়ে উঠতে অনুপ্রাণিত, সংগঠিত ও ক্ষমতায়িত করছে। ফলে তারা নাগরিকত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় সম্পৃক্তি ও বৈশ্বিক সংযুক্তির মাধ্যমে দায়িত্বশীল উন্নয়নে অবদান রাখতে পারছে। এরই ধারাবাহিকতায় দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উদ্যোগে এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় এই সামিট অনুষ্ঠিত হয়।