YEH কি?

জন্ম ইতিহাস : দি হাঙ্গার প্রজেক্ট ও ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার

বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে একটি  আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা হিসেবে ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর যাত্রা শুরু হয়। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশেই এর কার্যক্রম বিস্তৃত। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধন প্রাপ্তির মাধ্যমে কাজ শুরু করে। ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর একটি সহযোগী সংগঠন। বাংলাদেশে এ সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৫ সালে।

সামাজিক আন্দোলনের ভিত্তি: সামাজিক দায়বদ্ধতাবোধ

ছাত্র-ছাত্রীদের চরম আত্মত্যাগের মানসিকতার উৎস হলো, সমাজের প্রতি তাদের গভীর দায়বদ্ধতার মানসিকতা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মানুষ তার বিকাশের জন্য সমাজ থেকে প্রয়োজনীয় নির্যাস সংগ্রহ করে সমৃদ্ধ হয়। এই নির্যাসের আর্থিক মূল্য থাকলেও তা পুরোপুরি অর্থের মানদণ্ডে মূল্যায়ন করা অসম্ভব। এর মাধ্যমে মানুষ সমাজের কাছে ঋণের দায়ে আবদ্ধ হয়।

সমাজের কাছ থেকে যতটা গ্রহণ করে অধিকাংশ মানুষ ততটা প্রতিদান হিসেবে ফেরত দিতে পারে না। যারা গ্রহণ করার চেয়ে অধিক প্রতিদান দিতে সক্ষম হন, মূলত তাঁরাই সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত হন। এ ধরনের মানুষের পক্ষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব। তাঁরাই অসাধারণ হয়ে উঠতে পারেন। সীমিত সংখ্যক এ সকল ব্যক্তি সমাজে নিজ পদাঙ্ক রেখে যান। এ সকল দুঃসাহসিক ব্যক্তি আমাদের প্রেরণার উৎস। নতুন প্রজন্মের পবিত্র দায়িত্ব হল পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা। শুধু তাই নয়। এর সাথে আরো নতুন মাত্রার সংযোজন ঘটানো। যা নিঃসন্দেহে সামাজিক ঋণ পরিশোধ করার অন্যতম পন্থা। তাদের অবদানেই সমাজ আলোকিত ও সমৃদ্ধ হবে। এভাবেই আমরা সবাই এগিয়ে যাবো। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে এবং সমাজে যথাযথ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

দি হাঙ্গার প্রজেক্টএর অর্থায়ন

ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর অনুপ্রেরণায় সৃষ্ট একটি সহযোগী সংগঠন। ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্বেই এ সংগঠন পরিচালিত। তাই ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গারের সিংহভাগ সাংগঠনিক ব্যয় নির্বাহ হয় ইউনিট তহবিল থেকে। বিশেষ করে সদস্যরা সারা দেশে তাদের নেতৃত্বে যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে তার পুরো ব্যয় নিজেরাই বহন করে। ইউনিটের এ অর্থের উৎস – সদস্য চাঁদা ও বিভিন্ন আয়মূখী উদ্যোগ। এছাড়া দি হাঙ্গার প্রজেক্ট সংগঠনটিকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।

উল্লেখ্য যে, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট কোন দাতা সংস্থার অর্থে পরিচালিত হয় না। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বহু নিবেদিত প্রাণের ব্যক্তিগত অর্থায়নে বিশ্বব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তারা এই অর্থ দান-খয়রাত হিসেবে প্রদান করে না। মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা এবং পিছিয়ে পড়া জনগণকে এগিয়ে নিতে অংশীদারিত্বের নিদর্শন হিসেবে তারা এখানে ‘বিনিয়োগ’ করে থাকেন। যার প্রতিদান হিসেবে তারা দেখতে চান ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত আত্মনির্ভরশীল বিশ্ব।এ অংশীদারিত্ব ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গড়তে তাঁদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

প্রতীক

ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার-বাংলাদেশের প্রতীক গোলাকার বৃত্তে গাঢ় লাল রঙ্গের ওপর সাদা রঙ্গে বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত। মানচিত্রের ওপর দিয়ে সবুজ রঙ্গের বর্ডার। বর্ডারে সাদা রঙ্গে এক লাইনে লেখা-

এটি বাংলাদেশের প্রতীক। অন্যান্য দেশের প্রতীক ভিন্ন

ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার-বাংলাদেশকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ। তাই নিম্নে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ-এর প্রতীক তুলে ধরা হল-আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর প্রতীক আয়তাকার গাঁঢ় নীল রঙের ভিতরে সাদা রঙে ইংরেজী বর্ণে তিন লাইনে লেখা –THP_LOGO_HIGH_RES

এটি আন্তর্জাতিক প্রতীক।

 

 

বর্তমানে সারা দেশে এক লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রী ক্ষুধামুক্ত আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গঠনের প্রচেষ্টাকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার কাজে লিপ্ত। এ লক্ষ্যে তারা নানামুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর এই কাজের ভিত্তি হচ্ছে সামাজিক দায়বদ্ধতাবোধ। মূলত কর্মশালা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দায়বদ্ধতাবোধ সৃষ্টি করা হয়।
ক্ষুধামুক্তির এই গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের একজন স্বয়ংক্রিয় ও স্বেচ্ছাব্রতী সৈনিক হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষমতায়িত করতে ইয়ূথ লিডার্স ট্রেনিং পরিচালিত হয়। যার মাধ্যমে তাদের মধ্যে একটি ক্ষুধামুক্ত আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার সমন্বিত প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়। এ প্রত্যাশা অর্জনে নিবিষ্ট থাকতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় এবং কিছু সুস্পষ্ট কার্যক্রম হাতে নেয়।

নারীদের প্রতি বৈষম্য অবসান মূলক প্রচারাভিযান

সামাজিক আন্দোলনকে বেগবান করতে ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গারের সদস্যরা যে সকল সুস্পষ্ট কার্যক্রম হাতে নেয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘প্রত্যাশা, প্রতিশ্রুতি ও কার্যক্রম’ শীর্ষক কর্মশালা পরিচালনা। দেশব্যাপী পরিচালিত এ সকল কর্মশালার মাধ্যমে অন্যের মধ্যে সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা বোধ সৃষ্টি হয়, সকলের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের প্রত্যাশা জাগ্রত হয় এবং তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। যার ভিত্তি

স্যানিটেশন বিষয়ক সচেনতা

তে নানামুখী কার্যক্রম গৃহীত হয় এবং পরিচালিত হয়। যেমন: যুব সংসদ,সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচারাভিযান, গণিত উৎসব, পাঠাগার গঠন, পরিবেশ উন্নয়ন, বৃক্ষরোপণ,বিজ্ঞান ক্লাব, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণ, নিরক্ষরতা ও আর্সেনিক দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম, নারী নির্যাতন তথা উত্যক্তকরণ, বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রতিরোধ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মাদক প্রতিরোধসহ ইত্যাদি।
এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন সৃজনশীল বিষয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন, নারীদের প্রতি বৈষম্য অবসান ও বাল্যকাল থেকে তাদের প্রতি যত্ন নেয়া ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে কর্মসূচি গ্রহণ ও কন্যাশিশু দিবস উদযাপন, নিরক্ষরতা দূরীকরণে কর্মসূচী গ্রহণ

এবং আত্মকর্মসংস্থানমূলক উদ্যোগ ইত্যাদি । এভাবেই দি হাঙ্গার প্রজেক্ট কর্তৃক পরিচালিত গণকেন্দ্রিক উন্নয়নরচেষ্টার অংশ হিসেবে ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার সাংগঠনিক কাঠামোয় দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে সারা দেশে পাঁচ শতাধিক ইউনিট গঠিত হয়েছে। এ সকল ইউনিট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কলেজ, স্কুল, ক্লাব,এলাকা এবং ইউনিয়নভিত্তিক। প্রতি ইউনিটে সদস্য সংখ্যা ন্যূনতম ১১ থেকে ৪০জন।