বাংলাদেশে প্রায় দুই দশকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ অক্টোবর ২০০৮ এ তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ পাস করে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার জনগণের জানার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি হ্রাস ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা; জনগণের চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা সর্বোপরি জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তথ্য-অধিকার নিশ্চিত করতে গত ২৯ মার্চ ২০০৯ তারিখে ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ পাস করে।
২০০৮ সালে তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ জারি করা হলেও ওই অধ্যাদেশের ৮, ২৪ ও ২৫ নম্বর ধারা তিনটি – যথাক্রমে তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ, আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি এবং অভিযোগ দায়ের ও নিষ্পত্তিসংক্রান্ত বিষয়গুলো অকার্যকর থাকায় আইনটি মূলত সুপ্ত অবস্থায় ছিল। ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ জারি করে ১ জুলাই ২০০৯ তারিখ থেকে ওই ধারাগুলোসহ কার্যকর করা হয় এবং আইনটি বাস্তবায়ন করার জন্য ১লা জুলাই ২০০৯ তারিখেই তথ্য কমিশন গঠন করার মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়।
ছয় বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে ‘তথ্য অধিকার বিধিমালা, ২০০৯’ এবং তথ্য অধিকারসংক্রান্ত তিনটি প্রবিধানমালা প্রণীত হয়েছে, যা আইনের অনেক বিষয়কে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৯, ৩২ এবং ৩৯ ধারা তথ্য অধিকার আইনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যদিও জনগণের জন্য তথ্য অধিকার আইন প্রণীত হয়েছে তথাপিয় জনগণ এই আইন সম্পর্কে পর্যাপ্ত সচেতন হয়ে ওঠেনি। পাশাপাশি যাঁরা তথ্য প্রদান করবেন সেই কর্তৃপক্ষের সচেতনতা ও প্রস্তুতিও কাঙ্খিত মাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি, যা তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে আইন বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট সকলে মনে করেন।
এই অবস্থার প্রেক্ষিতে ইয়ূথ লিডারদের বিকশিত করার লক্ষ্যে গত ২৩ জুন ২০১৫ ইং তারিখে ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার বাংলাদেশ ৩০ জন বলিষ্ঠ ইয়ূথ লিডারদের অংশগ্রহনে আয়োজন করেছিলো দিন ব্যপী Right to Information (RTI) কর্মশালা। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ ট্রেনিং ইউনিটের চীফ ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার জমিরুল ইসলাম এবং মাহমুদ হাসান রাসেল, প্রোগ্রাম অফিসার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য কমিশনার জনাব নেপালচন্দ্র সরকার , তিনি অংশগ্রহনকারীদের সাথে অংশগ্রহন মূলক আলোচনা করেন। তার বক্তব্যে তিনি বলেন সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, জনগণই হবে প্রজাতন্ত্রের মালিক। এই অনুচ্ছেদের আলোকে তথ্যের মালিক জনগণ। তথ্য অধিকার আইন জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে সহায়ক হতে পারে। তোমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্যপ্রাপ্তির মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতায়ন করতে পারো। অংশগ্রহনকারীদের উদ্দেশ্যে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন সময়ের চাহিদায় তখনকার দিনে জ্ঞানকে শক্তি বলা হলেও বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম অগ্রসরতার যুগে মূলত তথ্যই শক্তি। এক যুগ পূর্বে যে ব্যক্তি যতবেশি পুস্তকের জ্ঞানে সমৃদ্ধ ছিল সে ব্যক্তি ততবেশি জ্ঞানী বলে বিবেচিত ছিল। সময় পাল্টানোর সাথে মানুষের বিশ্বাসও বদলেছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যে ব্যক্তি যতবেশি তথ্য সমৃদ্ধ অর্থাৎ যার কাছে যত বেশি তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম বা উপায় থাকবে সে ব্যক্তি বর্তমান যুগের সাথে তত বেশি তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। অতীতে বিশাল ভলিউমের বইতে মানুষকে মুখ লুকিয়ে, দৃষ্টিকে নিবদ্ধ করে রাখতে হতো জ্ঞান সংগ্রহ কিংবা অর্জন করার জন্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে কম্পিউটার এবং ই-মেইলে যে দক্ষ সে ব্যক্তিই বিশ্বের সকল বিষয়ের সম্বন্ধে নিমিষেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়াও তিনি মনে করিয়ে দেন তরুণদের হাতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
এছাড়া সনদ বিতরণ ও সমাপনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের নাছিমা আক্তার জলি-ডেপুটি ডিরেক্টর(কর্মসূচী) এবং বিশিষ্ট উন্নয়ন সংগঠক তাজিমা হোসেন মজুমদার।